বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:বৃহস্পতিবার ছিল চমকে ওঠার মতো দিন। করোনা–সময়ে যে লকডাউন চলেছে সারা দেশ জুড়ে, তাতে যতটা সাড়া পাওয়া গিয়েছে, তার চেয়েও অনেক বেশি সফল লকডাউন এদিন দেখল বাংলা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কার্যত বন্‌ধের চেহারা নেয় গোটা রাজ্যই। রাস্তায় গাড়িঘোড়া তেমন দেখা যায়নি। লোকজনও বিশেষ ছিল না। বরং ছিল পুলিশের তৎপরতা। কাউকে কোথাও দেখলে যখন তখন পুলিশ ধরেছে, জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এদিন পুলিশের নাকচেকিং ছিল বেশ কড়া।

কলকাতা–সহ গোটা রাজ্যেই সর্বাত্মক লকডাউন ছিল এদিন। তবু যাঁরা নিয়ম না মেনে রাস্তায় বেরিয়েছেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ড্রোন উড়তেও দেখা গিয়েছে। সকালের দিকে কোথাও জটলা দেখলেই লাঠি নিয়ে তেড়ে গিয়েছে পুলিশ। অনেককে কান ধরিয়ে ওঠবোসও করিয়েছে। তবে সার্বিক ভাবেই এদিন জনতা ছিল সংযত। অনেকের মতে, হয়তো করোনার ভয়াবহতা অধিকাংশ মানুষের কাছেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তাই তাঁরা বেশির ভাগই রাস্তায় বের হওয়ার ঝুঁকি নেননি। আবার অনেকে এর আগে কলকাতা–সহ রাজ্যে লকডাউন সে ভাবে সফল না হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেও দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, বৃহস্পতিবারের মতো লকডাউন আগেও বাংলায় হয়েছিল। করোনা–সময়ে লকডাউন শুরু হওয়ার সময় পুলিশও ছিল যথেষ্ট কড়া। কিন্তু আচমকাই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে সংযত হওয়ার নির্দেশ দেন। তার পর পুলিশও নিজেকে গুটিয়ে নেয়। ফলে লকডাউনে পুলিশের নির্দেশ অমান্য করার প্রচেষ্টাও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হরবখত দেখা গিয়েছিল।

কিন্তু বৃহস্পতিবার ছিল পুরোপুরি ব্যতিক্রম। পুলিশ কড়া হাতে লকডাউনের নিয়ম কার্যকর করতে ছিল বদ্ধপরিকর। সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ি ছিল রাজ্যের কনটেনমেন্ট এলাকাগুলিতে। লকডাউনের নিয়মভঙ্গ করায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত শুধু কলকাতাতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৮৮৬ জনকে। এ ছাড়াও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৩০টি গাড়ি। এ ছাড়া মাস্ক না পরে বের হওয়ায় আটক করা হয়েছে ৫৫২ জনকে। আর রাস্তায় প্রকাশ্যে থুতু ফেলার জন্যেও পুলিশ এদিন ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে সার্বিক ভাবে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই লকডাউন মেনে চলেছেন এদিন। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বা কারণে ছাড়া বেশি গাড়ি রাস্তায় বের হয়নি এদিন। আবার এদিন কলকাতা–সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চেনা–অচেনা পাখিদের দেখা গিয়েছে। ঝাড়গ্রামের রাস্তায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়িয়েছে একের পর এক ময়ূর। উল্লেখ্য, রাজ্যে করোনা সংক্রমণ ক্রমাগত বেড়ে চলায় গত সোমবার স্বরাষ্ট্র সচিব নবান্ন থেকে সপ্তাহে দু’দিন কমপ্লিট লকডাউনের কথা ঘোষণা করেন। এদিন ছিল প্রথম দিনের লকডাউন। পরের লকডাউন হবে আগামী শনিবার।

আরও একটা রেকর্ড এদিন দেখা গেল বাংলার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। করোনা–সময়ে সবচেয়ে বেশি রোগী সুস্থ হয়ে উঠলেন এদিনই। স্বাস্থ্য ভবনের প্রকাশিত বুলেটিন থেকে জানা গিয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ২ হাজার ৪ জন। এর ফলে গোটা রাজ্যে করোনা–মুক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৬৫৬ জন। ফলে এদিন পর্যন্ত রাজ্যে সুস্থতার হার পৌঁছে গিয়েছে ৬১.১৬ শতাংশে। তবে এদিন সংক্রমণও রেকর্ড করেছে রাজ্যে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৩৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে কলকাতারই রয়েছেন ৭৯৫ জন। এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনায় ৫৪৫, হাওড়ায় ৩০৩, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৭৩, হুগলিতে ৮৭, পশ্চিম বর্ধমান ও দার্জিলিংয়ে ৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদিন একমাত্র ঝাড়গ্রাম থেকেই কোনও সংক্রমিতের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৭৫৭ জনে।

এদিন করোনায় সংক্রমিত হয়ে রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ জন। মৃতদের মধ্যে কলকাতারই রয়েছেন ১৯ জন, এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনায় ৬ জন, হাওড়ায় ৩ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২ জন, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান ও হুগলি থেকে ১ জন করে এদিন মারা গিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত করোনা সময়কালে গোটা রাজ্যে সংক্রমিত হয়ে মারা গিয়েছেন ১ হাজার ২৫৫ জন। এর মধ্যে কলকাতায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৪২ জন। রাজ্যে এদিন করোনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৫৮টি। ফলে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট ৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ২৭টি করোনা পরীক্ষা হয়েছে।